চাঞ্চল্যকর তথ্য ! কুমিল্লা সিটি মেয়রের হোটেল সদস্যের মাধ্যমেই ৫২ কেজি গাঁজার চালান বুকিং

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়রের রেফারেন্সে বক্স খাটের ভেতর লুকিয়ে ৫১ কেজি ৯০০ গ্রাম গাঁজা রাজশাহীতে পাঠিয়েছে নিসা টাওয়ারের হোটেল রেড রুফ ইনের এক হোটেল বয়। এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন হোটেল রেড রুফ ইনের কর্মচারী এবং মেয়রের মামাতো শ্যালকসহ আরও দুইজন। কুমিল্লার ধর্মপুর শাখার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বক্স খাটের ভেতরে মাদকের এই চালান পাঠানো হয়।

ধর্মপুর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের এজিএম মো. শফিকুল ইসলাম অপু জানান, গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) রাত ৮টায় কিছু ফার্নিচার নিয়ে আসে হোটেল রেড রুফ ইনের হোটেল বয় মো. সোহেল। এগুলোর প্রেরকের ঘরে হুমায়ুন কবির এবং প্রাপক হিসেবে রাজশাহীর মুক্তার হোসেনের নাম দেয় সে। পাঠানো হয় রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা মোড়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের শাখায়। তবে এসব আসবাবপত্র বুকিংয়ের সময় রেফারেন্স হিসেবে ‘মেয়র, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন’ লেখা হয়েছিল।

ফার্নিচারগুলো বুকিং দিয়েছিলেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের স্টাফ জসিম উদ্দিন। বুকিংয়ের ডেলিভারি চার্জ আসে ১২ হাজার ৬০০ টাকা। তখন হোটেল রেড রুফ ইনের কর্মচারী পরিচয়ে ফারুক নামে এক ব্যক্তি এবং হোটেলের জিএম আরিফ মেয়র মনিরুল হক সাক্কু সাহেবের শ্যালক পরিচয়ে মোবাইল ফোনে অনুরোধ করে ডেলিভারি চার্জ কমিয়ে নেওয়ার জন্য। এরপর রেফারেন্স হিসেবে ‘মেয়র, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন’ লেখা দেখে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ওই স্টাফ মেয়র সাহেবের সম্মানে বিল কমিয়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

কুরিয়ার সার্ভিসটির ধর্মপুর শাখার এজিএম মো. শফিকুল ইসলাম অপু আরও জানান, আসবাবপত্র নিয়ে আসা হোটেল রেড রুফ ইনের হোটেল বয় মো. সোহেল জানান, নগদে নয় বাকিতে মালপত্রগুলো পাঠানো হবে। রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা মোড়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের শাখায় মুক্তার হোসেন নামে ওই ব্যক্তি চার্জ দিয়ে আসবাবপত্র গ্রহণ করবেন।

রবিবার আসবাবপত্রগুলো রাজশাহীতে পৌঁছলে সোমবার (৩১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া থানা মোড়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বক্স খাটের ভেতর থেকে গাঁজার প্যাকেটগুলো উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় গাঁজাসহ ৫ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি। এ ঘটনায় পরে আরও একজনসহ মোট ছয় জনকে আটক করা হয়েছে।

এজিএম মো. শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, কার্টন, ব্যাগসহ সবসময় বুকিংয়ের সময় অন্যান্য আসবাবপত্র খুলে পরীক্ষা করা হলেও ওইদিন ফার্নিচার হওয়ায় তা চেক করা সম্ভব হয়নি। কারণ, বক্স খাটের মাথার পাশে বক্সটিতে পেরেক মারা ছিল। কিন্তু পরে জানতে পারি ওই ফার্নিচারের ওই বক্সের ভিতর ৫১ কেজি ৯০০ গ্রাম গাঁজা ছিল। 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রেড রুফ ইন এর জি এম আরিফের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে ফার্নিচারগুলো নিয়ে যাওয়া ব্যক্তি রেড রুফ ইনের হোটেল বয় সোহেল জানান, শুক্রবার রাতে হুমায়ুন কবির নামে তাদের এক কাস্টমার তাকে বলেছিল সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে ফার্নিচারগুলো দিয়ে আসতে। তখন সে এগুলো নিয়ে কুমিল্লার ধর্মপুর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে যায়। তবে তিনি জানতেন না ফার্নিচারের ভেতরে গাঁজা রয়েছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু জানান, আমার পরিচয় ব্যবহার করে গাঁজা পাচারের বিষয়টি আমি শুনেছি। রেড রুফ ইন-এর হোটেল বয়, কর্মচারী হোটেলে থাকলেও জিএম আরিফ ছুটিতে আছেন। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে। তিনি বাড়িতে আছেন। তারপরও এরকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আমার রেফারেন্স যারা ব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, নগরীর রেসকোর্স নিসা টাওয়ার এবং হোটেল রেড রুফ ইন সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান।

গাঁজা পাচারের ঘটনায় রাজশাহীতে র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার দুয়ারী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে দুলাল (৩০), তানোরের দেউরাতলা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (২৪), একই উপজেলার সেদায়ের এলাকার মৃত আফসার আলীর ছেলে বাদশা (৩২), সিধাইড় গ্রামের মেরাজ উদ্দিনের ছেলে সোহান আলী (২১), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার বেলতলি এলাকার সুলতান আহমেদের ছেলে মুকতুল হোসেন (৩২) এবং একই থানার মাদলা এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে বাপ্পি (৩০)।

কুমিল্লা র‌্যাব-১১-সিপিসি-২-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব জানান, ফার্নিচারের ভিতরে লুকিয়ে কুমিল্লা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গাঁজা পাচার করা হয়েছে। পরে রাজশাহী র‌্যাব-৫ মাদকগুলো উদ্ধার করেছে বলে জেনেছি। তবে এর বেশি কিছু আমাদের জানা নেই।

সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

Share this post

PinIt
scroll to top