কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের বেহাল দশায় সীমাহীন যাত্রী দুর্ভোগ

কয়েকটি জেলার যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে চারলেনে রূপান্তরের কাজ চলছে চরম ধীরগতিতে। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল দশায় যাত্রী দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এর শিকার হচ্ছেন কুমিল্লা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার যাত্রী, নোয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুরসহ অন্যান্য জেলার যাত্রীরাও।

যাত্রী ও পরিবহন চালকদের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই বছর ধরে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন এই সড়কে চলাচল করা হাজারো গাড়ির যাত্রী।

ভাঙা সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে সময় নষ্ট, যানজট আর গাড়ি বিকল হওয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকরা। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের অধিকাংশই ভাঙা। কুমিল্লা পদুয়ার বাজারের পর থেকে ভাঙা শুরু হয়েছে। এসব স্থানে গাড়ি চলে হেলেদুলে। ধীর গতিতে গাড়ি চলায় সেখানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকছে।

স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও মহাসড়কে কাজের ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গত বছর (১৯ ডিসেম্বর ২০১৯) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘মহাসড়কের আয়ুষ্কাল: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে নিজের এলাকায় যেতে লজ্জা লাগে। সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য লজ্জায় গাড়ির গ্লাস তুলে রাখতে হয়, নামানো যায় না। দ্রুতও যাওয়া যায় না, রাস্তা খারাপ। মানুষ গালমন্দ করে।’

অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তেব্যের চার দিন পর (২৩ ডিসেম্বর ২০১৯) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্মাণ কাজে ধুলা ওড়াটাই স্বাভাবিক। আমি উনাকে (অর্থমন্ত্রী) বলেছি। ওই রাস্তাটি (কুমিল্লা-নোয়াখালী) ফোর লেন করা হচ্ছে। কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কেতো ধুলোবালি উড়বেই, এটাই বাস্তবতা। উনি (অর্থমন্ত্রী) তো ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ভালোভাবেই যাচ্ছেন।’

কুমিল্লার লাকসামে মহাসড়কের গর্তে ট্রাক আটকে পড়ায় দিনভর যানজটের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে হাজারো যাত্রীর। পাঁচ ঘন্টা বন্ধ ছিলো মহাসড়ক। এ ঘটনাটি ঘটে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম জংশনের মিশ্রী এলাকায়। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, সকাল ১০ টার দিকে একটি মালবাহী ট্রাক কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লাকসাম মিশ্রী দারোগা বাড়ির সামনে গর্তে আটকে গেলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে ঢাকা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-নোয়াখালী,কুমিল্লা-নোয়াখালী,কুমিল্লা-লক্ষীপুরসহ কয়েকটি সড়কে আন্তঃজেলা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ওই আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। এদিকে প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর পুলিশ এসে ট্রাকটি সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। তবে ওই গর্তে আরো বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ায় এ দুর্ভোগ দিনভর লেগেই ছিল।

বেশি খারাপ অবস্থা বাগমারা বাজার ও লাকসাম বাইপাসের দক্ষিণ অংশে। এ ছাড়া লালমাই, হরিশ্চর, লাকসাম বাইপাস, খিলা, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাসার, সোনাইমুড়ি, বেগমগঞ্জ থানা এলাকাসহ মাইজদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙা রয়েছে। এদিকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের ফোরলেন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজার বাইপাস ও লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার। এখানেই বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। এ দুই স্থানে ফোরলেনের কাজও শুরু হয়নি।

কবে শুরু হবে তারও কোনো তথ্য নেই। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার তথ্যানুযায়ী, কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার ফোরলেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কুমিল্লা, চাঁদপুর,  নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলাসহ সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া কাজ ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। এর ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবারক উল্যাহ কায়েস বলেন,  দৌলতগঞ্জ বাজার বাইপাসে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাণিজ্যিক কেন্দ্র খ্যাত দৌলতগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই বাইপাসের কাজটি দ্রুত শেষ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। উপকূল বাস সার্ভিসের পরিচালক অধ্যাপক কবির আহমেদ জানান, সড়ক ভাঙা হওয়ায় ঘন ঘন গাড়ি বিকল হচ্ছে। দ্রুত সড়কটি মেরামত করা না হলে গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ ছাড়া লালমাইয়ের পরে সড়কের লাকসাম পর্যন্ত এখনো ফোরলেনের টেন্ডার হয়নি।

প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ধীরগতির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হলেও সড়কের পাশে বড় গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, ‘৫৯ কিলোমিটার কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলছে। খাল, বিল, গর্ত ভরাট করা ও সড়কের পাশের বিদ্যুতের খুঁটি সরানোসহ বর্ধিতকরণের কাজ নিয়েও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সড়কের অনেক অংশের কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করবো।’

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হওয়ার পরেই সরকার কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের চার লেনের কাজে হাত দেয়। কাজটি শেষ হলে কুমিল্লা ও রাজধানীর সাথে চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলাসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট জেলা গুলোর যোগাযোগে নতুন গতি আসবে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে । 

Share this post

PinIt
scroll to top