বুড়িচংয়ে সড়ক-সেতুর বেহাল দশায় ভোগান্তিতে জনসাধারণ

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় যোগাযোগের জন্য তৈরি বেশীর ভাগ সড়ক এবং সেতুর বেহাল দশার কারণে ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। 

৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ১নং রাজাপুর ইউনিয়নে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে সেগুলোর বেহাল দশায় জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত জনসাধারণ চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।
 

একসময় নৌকা ও রেলপথই ছিল যাতায়াত ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম এ ইউনিয়নে। পরবর্তীতে ইউনিয়ন ও উপজেলার সাথে যোগাযোগের জন্য কয়েকটি সড়ক তৈরি করা হয়।

বর্তমানে ওই ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি সড়কের কার্পেটিং ও পলেস্তরা উঠে গিয়ে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন ও মানুষ চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়ায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসীরা।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মধ্যে ১নং রাজাপুর ইউনিয়নের সড়কের সর্বত্রই ভাঙাচোরা অবস্থা, যা বৃষ্টিতে আরো চরম আকার ধারণ করেছে।

প্রায় সব সড়কের কার্পেটিং, পিচ এবং কংক্রিট উঠে গিয়ে বৃষ্টির পানি জমে সেসব জায়গায় ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বারেশ্বর চৌমুহনী ভায়া লড়িবাগ টু শংকুচাইল সড়কের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।

উপজেলার উত্তরাংশের অংশ হওয়ায় যেন দেখার কেউ নেই। সিন্দুরী ব্রিজের পশ্চিমাংশের সড়কের ইটের সুরকি উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত ও কাঁদা মাটি দেখা দিয়েছে ফলে একটু বৃষ্টি হলে সেখানে পানি জমে যাচ্ছে।

এদিকে, রাজাপুর রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশের সেতুটিও প্রায় কয়েক বছর যাবত ভেঙে পড়ে আছে। জোড়াতালি দিয়ে স্টিলের দু’একটি পাত ফেলে রেখে বছরের পর বছর ধরে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

সম্প্রতি রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশের ওই ভাঙা ব্রিজ পরিদর্শন করেছেন বুড়িচং উপজেলা প্রকৌশলী অনুপ কুমার বড়ুয়া।

তিনি জানান, উক্ত ব্রিজটি কিভাবে মেরামত করা যায় সেটির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুর রশিদ ও উমর ফারুক জানান, শংকুচাইল থেকে দক্ষিণগ্রাম সড়ক, শংকুচাইল কাজী বাড়ী থেকে ঘিলাতলা আদর্শ গ্রাম ও শংকুচাইল পূর্বপাড়া সড়কের সংস্কার ও মেরামত অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।

রাজাপুর ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রামের অনেক সড়ক ও সেতু রয়েছে যেগুলো দিয়ে প্রতিদিন পাশের গ্রাম শংকুচাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, পাঁচোড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন, বারেশ্বর, লড়িবাগ, চড়ানল, পূর্ণমতি, টাকই, জিরুইন, ভরভাঙ্গাইন্না ও সাহেবাবাদ গ্রামের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন।

এছাড়াও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ব্রাহ্মণপাড়া ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চড়ানল মাদ্রাসা, পাচোঁড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

জানা গেছে, রাস্তার এমন বেহালদশা, তার উপর ভেঙে পড়া সেতু পারাপার হওয়ার জন্য অতিরিক্ত ভাড়াও গুণতে হচ্ছে।

ইউনিয়নের এ বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো কাঁচা রাস্তা ব্যবহার করে চলেছেন। বর্তমানে চড়ানলের রেলক্রসিং সংলগ্ন স্থানে কিছুটা সড়ক পাকা করা হলেও লড়িবাগ-বারেশ্বর মাদ্রাসা রাস্তা, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নগড়পাড়-বারেশ্বর-সাহেবাবাদ বাজার সংযোগ রাস্তা এখনও মাটির তৈরিই রয়ে গেছে।
 
এছাড়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে উপজেলার সড়কগুলোর যোগাযোগের ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় উপজেলা সদরের অফিস আদালতে, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাতায়াতে সময়ক্ষেপণসহ ঝুঁকি নিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়।

অনেক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উপজেলা সদরে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে আসতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
 
এদিকে, এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এলাকার ভাঙাচোরা সড়কগুলোর কিছু সংস্কার করা হলেও বর্তমানে এগুলোর সঠিক পরিচর্যা না করায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী অনুপ কুমার বড়ুয়া জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সড়কগুলোর অধিকাংশ সংস্কার এবং অনেক নতুন সড়ক ও সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি যে সমস্ত সড়ক ও সেতুর বেহাল অবস্থা রয়েছে সেগুলোর কাজও করা হবে।

সড়কের কাজ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে স্থানীয় এমপি, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনই আশা করছেন এলাকাবাসীরা।

Share this post

PinIt
scroll to top